চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর বিএনপি নেতা আয়ূব জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলার প্রধান আসামী মোঃ শাহাব উদ্দিন প্রকাশ সুমন’কে ঢাকা মহানগরীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন পশ্চিম মাটিকাটা এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।

র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের প্রতিষ্ঠাকাল ২৬ মার্চ ২০০৪ সাল থেকে অদ্যাবধি দেশব্যাপী বিভিন্ন অভিযানে চাঞ্চল্যকর হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় ৬,৭৬১ জন গ্রেফতার, অস্ত্র সংক্রান্ত মামলায় ১৪,৬৯৪ জন গ্রেফতারসহ ২০,৩৪২টি অস্ত্র, ২,৬৯,৯২১ রাউন্ড গোলাবারুদ ও ৭,৪৭৬.১ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার এবং ১ লক্ষ ৫০ হাজারের অধিক মাদক কারবারি গ্রেফতারসহ ৬,২৯২ কোটি টাকা মূল্যমানের মাদক উদ্ধার করে র্যাব। পাশাপাশি ৫,৬৭৮ জন অপহরণকারী গ্রেফতারসহ ৪,১৬৬ জন ভিকটিম উদ্ধার এবং মানবপাচারকারী ১,৮০৪ জন গ্রেফতারসহ ১,৪৫৭ জন ভিকটিম উদ্ধার, ছিনতাইকারী ও ডাকাত গ্রেফতার ১৫,৭০৩ জন, জলদস্যু ও বনদস্যু গ্রেফতার ৯৯০ জন, বিভিন্ন প্রকার প্রতারণারদায়ে গ্রেফতার ৭,৬৪৭ জনসহ অন্যান্য অপরাধে ২৮,৭৮০ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন অপরাধে দেশব্যাপী র্যাব কর্তৃক ৯৬,৫০৭টি মামলা রুজু করা হয়েছে এবং র্যাব ফোর্সেস কর্র্তৃক এ পর্যন্ত তদন্তকৃত ও তদন্তাধীন ২,৫০০টি মামলা রয়েছে।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ০৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখ হতে অদ্যাবধি দেশব্যাপী বিভিন্ন অভিযানে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় ৩৮২ জন গ্রেফতার, ধর্ষণ মামলায় ১১৮ জন গ্রেফতার, অস্ত্র সংক্রান্ত মামলায় ৮০ জন গ্রেফতারসহ ৪৮৪টি অস্ত্র, ২০ হাজারের অধিক রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার এবং ১ হাজারের অধিক মাদক কারবারি গ্রেফতারসহ বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার করে র্যাব। পাশাপাশি ১২৭ জন অপহরণকারী গ্রেফতারসহ ১১৪ জন ভিকটিম উদ্ধার এবং ছিনতাইকারী ও ডাকাত গ্রেফতার ২০৮ জন, জেল পলাতক ১১৮ জনসহ অন্যান্য অপরাধে ৮৭৮ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
নিহত ভিকটিম মোঃ আয়ুব জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রাম জেলার সন্ধীপ থানার গাছুয়া এলাকায় বাসিন্দা। ভিকটিম আয়ুব জাহাঙ্গীর আলম এর পৈত্রিক দলিলীয় ভূমিতে সরকারীভাবে রায়তি আনার অজুহাত দিয়ে জৈনক আবু তাহের দীর্ঘদিন হতে বসবাস করে আসছে। ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলম আবু তাহেরকে দখলকৃত ভূমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করলে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। গত ২০ জানুয়ারি ২০২৫ইং তারিখে আনুমানিক ১২০০ ঘটিকায় নিহত ভিকটিম তাহার বসতঘরের বিশ্রামে ছিল। এসময় ভিকটিমকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে জৈনক সুমন নামীয় একজন কল করে বাসার বাহিরে যেতে বলেন। পরবর্তীতে ভিকটিম তার বসত বাড়ী হতে সন্ধীপ থানাধীন গাছুয়া ইউনিয়নের ০৯নং ওয়ার্ড এলাকার আব্দুর রহিম এর পুকুর পাড়ে আসিলে সেখানে পূর্ব হতে থাকা মোঃ শাহাব উদ্দিন সুমন এর সাথে ভিকটিমের পাওনা টাকা নিয়ে কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মোঃ শাহাব উদ্দিন ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে জোর পূর্বক মটর সাইকেল যোগে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেস্টা কালে ভিকটিম বাধা প্রধান করলে মোঃ শাহাব উদ্দিন প্রকাশ সুমন এবং তার অন্যান্য সহযোগীরা ভিকটিমকে হত্য উদ্দেশ্যে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে গুরত্বর রক্তাক্ত জখম করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার এবং স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গাছুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষনা করেন।
উক্ত ঘটনায় নিহত ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার সন্ধীপ থানায় ০৭ জনকে এজাহারনামীয় আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৯, তারিখ-২১ জানুয়ারি ২০২৫ ইং, ধারা-৩৬৪/৩০২/৩৪,দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারির এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, সূত্রে বর্ণিত হত্যা মামলার এজাহারনামীয় পলাতক প্রধান আসামী মোঃ শাহাব উদ্দিন প্রকাশ সুমন ঢাকা মহানগরীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন পশ্চিম মাটিকাটা এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এবং র্যাব-০৪ মিরপুর এর যৌথ আভিযানিক দল গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে আনুমানিক ১১৩০ ঘটিকায় বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ শাহাব উদ্দিন প্রকাশ সুমন (৪৫), পিতা-গিয়াস উদ্দিন, সাং- গাছুয়া, থানা-সন্ধীপ, জেলা- চট্টগ্রাম’কে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ শাহাব উদ্দিন প্রকাশ সুমন’কে জিজ্ঞাসাবাদে সে সূত্রে বর্ণিত মামলার ০১নং এজাহারনামীয় পলাতক আসামী এবং সন্দ্বীপ থানার বিএনপি নেতা আয়ুব জাহাঙ্গীর আলম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এছাড়াও সে মামলা দায়ের এর পর হতে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আসছিল বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাদেরকে চট্টগ্রাম জেলার সন্ধীপ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।