ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবর্ষণ করে হত্যা মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি মোঃ কামাল উদ্দিন ভূঞাঁ’কে ফেনী জেলার সদর থানাধীন পশ্চিম রামপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব এর সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার সহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগণের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ভিকটিম জাফর আহম্মদ (৫৩) ফেনী জেলার সদর থানাধীন ফতেহপুর গ্রামের ওবায়দুল হকের ছেলে এবং পেশায় একজন টমটম চালক। দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ০৩ আগস্ট ২০২৪ইং তারিখ আনুমানিক ১৪০০ ঘটিকায় ফেনীর ট্রাংক রোডের খেজুর চত্তর এলাকায় স্থানীয় ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিল। উক্ত কর্মসূচিতে ফেনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ছাত্র জনতার সাথে ভিকটিম জাফর আহম্মদ অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ প্রেক্ষিতে স্থানীয় শর্শদী ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম ভূইয়া ভিকটিমের বাসায় এসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভিকটিমের অবস্থানের ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে ভিকটিম জাফর আহম্মদকে হত্যার হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীতে গত ০৪ আগস্ট ২০২৪ইং তারিখ আনুমানিক ১২৩০ ঘটিকায় ভিকটিম টমটমে যাত্রী নিয়ে ফেনী পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে শর্শদী ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম ভূইয়া, মোঃ কামাল উদ্দিন ভূঞাঁ সহ অন্যান্য আসামিরা ভিকটিমকে ধাওয়া করে জেল রোডস্থ ফেনী পুরাতন কারাগারের সামনে রাস্তার উপর ধরে ফেলে। এ সময় আসামিরা তাদের হাতে থাকা দেশীয় ধারালো অস্ত্র, রাম দা, চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড ও লাঠি-সোটা দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে ভিকটিমকে গুরুরত রক্তাক্ত জখম করে। এছাড়াও, আসামিরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ঘটনাস্থলে ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের স্ত্রী পথচারীদের সহযোগীতায় ভিকটিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানায় ২০৫ জন এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ১০০/১৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ০৩/৩৮২, তারিখ- ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং, ধারা- ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩০৭/৩২৬/৩০২/১১৪/৩৪, দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০ তৎসহ ১৯০৮ সালের বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের ধারা-৩/৬।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, সূত্রে বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি মোঃ কামাল উদ্দিন ভূঞাঁ ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানাধীন পশ্চিম রামপুর চৌরাস্তায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ০১ নভেম্বর ২০২৪ইং তারিখ আনুমানিক ২০৪০ ঘটিকায় বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি মোঃ কামাল উদ্দিন ভূঞাঁ (৩৯), পিতা-মৃত আলী নেওয়াজ, সাং-পশ্চিম রামপুর, থানা-ফেনী সদর, জেলা-ফেনী’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি মর্মে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে সে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট থেকে গ্রেফতার এড়াতে ফেনী জেলার বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আসছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাকে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।