চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ এলাকায় কিশোর গ্যাং গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখমকারী সন্ত্রাসী মানিক গ্যাং গ্রুপ প্রধান মোঃ মানিক @ লাল মানিক এবং এজাহারনামীয় দুই সহযোগীসহ মোট তিন (০৩) জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম।

“বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই ¯স্লোগান নিয়ে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

সারা দেশে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে। মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। নানা অপরাধে জড়িয়ে কিশোররা ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে স্থানীয় এলাকার একটি চক্রের মদদ রয়েছে। ‘হিরোইজম’ প্রকাশ করতেও পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে।

গত ১৫ আগস্ট ২০২৩ ইং ভিকটিম আবুল হাসনাস @বাবু জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্টান শেষে আকবরশাহ থানাধীন কর্ণেলহাটস্থ একটি ওভারব্রীজ এর পাশে অবস্থান কালে মানিক গ্যাং গ্রুপ প্রধান মোঃ মানিক @ লাল মানিক এবং তার অনুসারীদের সাথে বাকবীতন্ডা হয় এবং মানিক গ্যাং গ্রুপ প্রধান মোঃ মানিক @ লাল মানিক ভিকটিম আবুল হাসানাত @ বাবু’কে দেখে নেয়ার হুমকী প্রদান করে ঘটনাস্থল হতে চলে যায়। পরবর্তীতে গত ১৮ আগস্ট ২০২৩ ইং মানিক গ্যাং গ্রুপ প্রধান মোঃ মানিক @ লাল মানিক এর নেতৃত্বে অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনের একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ আকবরশাহ থানাধীন জানারখীল এলাকায় ভিকটিম আবুল হাসানাত @ বাবু’কে একা পেয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্মমভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের ভাবি বাদী হয়ে মোঃ মানিক @ লাল মানিক এবং আরো ১০/১২ জনকে এজাহার নামীয় আসামী করে চট্টগ্রাম মহানগররী আকবরশাহ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-২৭, তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২৩ ধারাঃ ১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৫০৬ পেনাল কোড ১৮৬০। মামলা দায়েরের পর হতে বর্ণিত ঘটনার প্রধান আসামী মোঃ মানিক @ লাল মানিক এবং তার অন্যান্ন আসামীরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়।

র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত মামলার পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, সূত্রে বর্ণিত মামলার এজাহার নামীয় পলাতক আসামী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম আকাশ ফেনী জেলার সোনাগাজী পৌরসভা এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ২৭ আগস্ট ২০২৩ ইং তারিখ বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী ১। মোঃ জাহাঙ্গীর আলম আকাশ (২৬), পিতা-মৃত মোশারফ হোসেন, সাং-নয়াপাড়া, থানা- পাহাড়তলী, জেলা-চট্টগ্রাম’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে আসামী জাহাঙ্গীর আলম আকাশ এর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লা জেলার নাংগলকোট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী ২। মোঃ মানিক @ লাল মানিক(২৭), পিতা-মৃত মোঃ মোস্তফা, সাং-বিশ্বকলোনী, থানা-আকবরশাহ, জেলা-চট্টগ্রাম এবং ৩। মোঃ রুবেল (২৬), পিতা-মোঃ বাবুল সওদাগর, সাং-জানারখিল, থানা-আকবরশাহ, জেলা- চট্টগ্রাম মহানগরীদের আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তার সূত্রে বর্ণিত মামলার এজাহার নামীয় পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাবাসাবাদে আরও জানা যায়, তারা এলাকায় প্রভাব বিস্তারকারী সক্রিয় মানিক গ্যাং গ্রুপের নেতৃত্ব দিত এবং এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন নাশকতামূলক কাজ করত। উক্ত সংর্ঘষের কারণে স্থানীয় জনসাধারণ ভীতি ও শংকার মধ্যে জীবন যাপন করত।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।