ভূমি বিরোধের জেরে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীকে ১০ বছর পর র্যাব-৭ কর্তৃক গ্রেফতার।
১। বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
২। ভিকটিম নুরুল হক @হকি কোম্পানী (৫৫) এর সাথে পূর্ব হতে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় থানার লালছড়ির বাসিন্দা মিজানুর রহমান, ও তার ছেলে আব্দুল মোতালেব, রেজাউল করিম, শাহ আলম, মোঃ হারুন, মোঃ রাসেল ও নুরুল আবছারের সাথে জমিজমা সংক্রান্তে বিরোধ চলে আসছিল। উক্ত বিরোধের জেরে গত ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ইং তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক ১৮৩০ ঘটিকায় নুরুল হক তার নিজ বাড়ি হতে খাগড়াবিল বাজারে আসার সময় লালছড়ি নামক স্থানে পৌছালে বর্ণিত আসামীগণ ধারালো অস্ত্রশস্ত্র, লোহার রড, রামদা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমের পিঠ, কপাল ও হাঁটুর নিচে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে গুরুতর আহত ভিকটিমকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত আনুমানিক ২১১৫ ঘটিকায় ভিকটিম মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত অমানবিক, পাশবিক ও চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি সে সময় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
৩। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের ছেলে মোঃ নুরনবী বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় থানায় ০৭ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-০১(০২)১৪, জিআর-০৮/১৪, ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। মামলা দায়েরের পর হতে আসামীরা আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
৪। মামলাটি তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ১০ নভেম্বর ২০১৪ খ্রিঃ তারিখে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচারকার্য শুরু হয়। ঘটনার পর হতে বর্ণিত মামলার অন্যতম প্রধান আসামী মোঃ রাসেল আত্মগোপনে চলে যায়। আসামী মোঃ রাসেল দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত পুলিশের তদন্ত এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহন শেষে উক্ত আসামীর অনুপস্থিতিতে ২৯ মে ২০২৩ ইং তারিখে ভিকটিম নুরুল হক @ হকি কোম্পানীকে হত্যার দায়ে আসামী মোঃ রাসেল(৩৩) সহ মোট ০৭ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন।
৫। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ রাসেলকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে যে, বর্ণিত হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামী মোঃ রাসেল (৩৩) আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনামে ফেনী জেলার ফুলগাজী থানাধীন নতুনপাড়া এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ১১ জুন ২০২৩ ইং তারিখে বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ রাসেল (৩৩), পিতা- মিজানুর রহমান, গ্রাম-লালছড়ি, থানা- রামগড়, জেলা- খাগড়াছড়ি’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
৬। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করেন। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, সে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনাম ধারণ করে দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পেশায় আত্মগোপনে থেকে সর্বশেষ ফেনী জেলার ফুলগাজী থানাধীন নতুনপাড়া এলাকায় বসবাস শুরু করেছিল।
৭। গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।